২০৫০ সালে দেশে কিডনি রোগী হবে ৫০ লাখ -কালবেলা
রাজধানীতে ‘আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কার্যকরী কোনো কাজই করছে না। আমরা নিজেরাও পরিবেশ নিয়ে সচেতন নই। ঢাকার বায়ু দূষণ মাঝে মধ্যে মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে আগামী ২০৫০ সালে কিডনি রোগী হবে ৫০ লাখ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সিদ্বেশ্বরী রোডে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. ইউনুস মিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাপস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণী তথা পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, ইউএসএআইডির আশরাফুল হক, ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের জাস্টিন গ্রিন ও ড. আবু মোস্তফা কামাল উদ্দিন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা, সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন ও সিনিয়র প্রভাষক মাহমুদা ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মারুফা গুলশাল আরা এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রিসার্চ ফেলো হুমায়ূন কবির।
সেমিনারে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোওয়ারী বলেন, ‘আমরা সব সময় পরিবেশ মহামারির মধ্যে বসবাস করছি। পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমরা সোচ্চার নই। সরকারি-বেসরকারি উভয়পক্ষই বৈশ্বিক উন্নত দেশের দূষণ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারছি না। স্থানীয়ভাবে আমরা যে পরিমাণ দূষণ করছি, তা ধারণার বাইরে। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা, বিশেষভাবে ক্যান্সার ও কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কিডনি রোগী হবে ৫০ লাখ। এত রোগীর ডায়ালাইসিস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ রকম দূরারোগ্য অনেক ব্যাধি বাড়ছে, যা আমাদের পরিবেশ দূষণের ফল।’
ফাতিনাজ ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের জীবনের জন্য ওজোন স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সহযোগিতাই পারে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষা করতে। এ ক্ষেত্রে যুবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা ধনীরাই মূলত পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। আমরা বাসা, অফিস ও গাড়িতে শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার করি, যা থেকে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। ফলে ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়।’
অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোই ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমণের জন্য প্রধানত দায়ী। এদের জন্য অনুন্নত দেশগুলো ভুক্তভোগী হতে পারে না।’
অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা তার উপস্থাপনার মাধ্যমে উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশের ওপর ওজোন স্তরের ক্ষয় ও অতিবেগুনি রশ্মির বিরূপ প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ওজোন স্তর ক্ষয় রোধে মন্ট্রিল প্রোটোকল ও ইইউ রেগুলেশন মান্য করার বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রতিকার করা সম্ভব।’
আশরাফুল হক বলেন, ‘জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি আমাদের পরিপালন করা দরকার। যদি আমরা এক্ষেত্রে সচেতন না হই, তবে পরিবেশের দূষণের দায় আমাদেরই নিতে হবে।’
ড. মাহমুদা পারভীন বলেন, ‘ক্রমাগত ওজোন স্তরের ক্ষয়ের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে চলে আসে। এর প্রভাব হতে আমাদের চোখকে নিরাপদে রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।’
Source: কালবেলা